Header Ads

Header ADS

জরিপ। জরিপ কি? জরিপ বলতে কি বুঝায়? জরিপের সাধারণ জ্ঞান।

What is the Survey? জরিপ। জরিপ কি? জরিপ বলতে কি বুঝায়? জরিপের সাধারণ জ্ঞান। 

 দাগঃ

ভূমি জরিপের দাগ একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। ধরি, পদুয়া একটি ছোট গ্রাম।পুরো গ্রামকে জমির পরিমাপ এর উপর ভিত্তি করে ছোট-বড় অসংখ্য খণ্ডে ভাগ করা হলো। পদুয়া গ্রামের জমি খন্ড গুলোকে ছোট ছোট খন্ডে বিভক্ত করা হলো। কিন্তু এই খণ্ডগুলো কিভাবে চিনব।চিনার  উপায় হচ্ছে সংখ্যা পদ্ধতি। মোবাইল নাম্বারের মতো একের পর এক সংখ্যা ব্যবহার করে খণ্ডগুলো পরিমাপ করা যাবে।তাতে করে যে সুবিধাটি হবে যখন যে জমির প্রয়োজন হবে সে জমির দাগ নম্বর বলে নম্বরটি বললেই হবে।সুতরাং,পদুয়া গ্রামের প্রতিটি জমির খণ্ডকে চেনার জন্য প্রতিটি খন্ডের যে পৃথক নম্বর দেয়া হয় তাকে দাগ নম্বর বলে।




 মৌজাঃ

পদুয়া গ্রামকে ভূমির ভাষায় মৌজা বলে।পদুয়া গ্রাম হয়ে গেল মৌজা আর এই মুহূর্তে কিছু জমির খন্ডে ভাগ করে প্রতিটি খন্ডের একটি নম্বর দেয়া হল। যে নম্বরকে দাগ বলে তাহলে সহজ কথায় বলা যায় কিছু দাগ নিয়ে একটি মৌজা গঠিত হয়।মৌজাকে ভূমি জরিপের একক বলা হয়।

অথবা অন্যভাবে বললে চলে-------

সিএস জরিপ এর সময় প্রতিটি উপজেলাকে অনেকগুলো খণ্ডে বিভক্ত করে প্রতিটি একককে ক্রমিক নম্বর দিয়ে চিহ্নিত করে জরিপ করা হয়েছে ।উপজেলার এরকম প্রতিটি একককে মৌজা বলে। এক বা একাধিক গ্রাম নিয়ে একটি মৌজা গঠিত হয়।আমরা জানি, পদুয়া গ্রামের প্রতিটি জমির খণ্ডকে চেনার জন্য প্রতিটি খণ্ডকে পৃথক নম্বর দেয়া হয়,তাকে দাগ নম্বর বলে। অনেকগুলো দাগ নিয়ে একটি মৌজা গঠিত হয়। মৌজাকে ভূমি জরিপের একক বলা হয়।


মৌজা ম্যাপঃ 

আমরা জানি,পৃথিবীর যেমন একটি ম্যাপ আছে। ঠিক তেমনি বাংলাদেশেরও একটি ম্যাপ আছে।সেভাবে, পদুয়া এর আরো একটি ম্যাপ আছে। পদুয়ার মৌজার ম্যাপকে মৌজা ম্যাপ বলে। এই ম্যাপে প্রতিটি খন্ডের  উপর সেই দাগ নম্বর লেখা থাকে।

  1. মৌজার নাম
  1. জেএল নম্বর
  1. সাংকেতিক চিহ্ন 
  1. বাটা দাগ
এবং ম্যাপটি ওই মৌজার কত নম্বর সিট এবং ওই মৌজার  চার পাশে অবস্থিত অন্যান্য মৌজার নাম থাকে। 

খতিয়ান নম্বর: 

পদুয়া গ্রামের সবগুলো জমিকে অনেক খণ্ডে ভাগাভাগি করা হলো। প্রতিটি দাগের একজন মালিক আছে।কোন ব্যক্তি একটি জমির  থাকতে পারে বা অনেকগুলো জমির মালিক থাকতে পারে।জমির সঠিক হিসাব এর জন্য একটি অ্যাকাউন্ট নম্বর দরকার হয়।আমরা প্রাত্যহিক জীবনে বিভিন্ন ধরনের একাউন্ট বা ঠিকানা খুলে থাকি। কারণ ,এগুলো খুলতে কিছু তথ্যের প্রয়োজন হয়। তথ্যগুলো আমাদের অ্যাকাউন্টকে সত্যায়িত করে।



ঠিক তেমনি জমির হিসাব এর জন্য যে অ্যাকাউন্ট নম্বর দেয়া হয় তাকে খতিয়ান নম্বর বলা হয়।যে অ্যাকাউন্ট নম্বর হতে জমির মালিক জমির দাগ নম্বর জমির পরিমাণ জমির শ্রেণী জমির মালিকের কতটুকু জমি আছে ইত্যাদি জানা যায়, তাকে খতিয়ান নম্বর খতিয়ান বলে।একটি খতিয়ান নম্বর এর মালিকের একটি জমি থাকতে পারে বা আবার একাধিক জমি থাকতে পারে। ঠিক তেমনি তার একটি মৌজাতে তার অনেকগুলো খতিয়ান থাকতে পারে। সাধারণ ভাষায় খতিয়ানকে রেকর্ড অফ রাইটস বা খতিয়ান সত্তলিপি বলা হয়।

সহজ ভাষায়,

সত্ত সংরক্ষণ ও রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যে সার্ভে কেন্দ্র কর্তিক প্রত্যেক মৌজা ভূমির মালিক বা মালিকগণের নাম পিতা অথবা স্বামীর নাম ঠিকানা জমির হিস্যা এবং শর্তাদি নম্বরসহ ভূমির পরিমাণ ইত্যাদি যেসব তালিকা প্রস্তুত করা হয় তাকে খতিয়ান বলা হয়। মালিকানার জন্য খতিয়ান খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়।

পর্চা বলতে কি বুঝায়

#পর্চা:

খতিয়ান এবং পর্চার মধ্যে অনেক লোকই পার্থক্য বুঝতে পারে না। পূর্বের পোস্ট গুলোতে আমরা খুব সাধারণভাবে খতিয়ান সম্পর্কে জেনেছি। পূর্বের পোস্ট গুলোতে আমি চেষ্টা করেছি খুব সহজ এবং কার্যকরী খতিয়ান সম্পর্কে আলোচনা করতে। এই পোস্টটি পড়ে আপনারা অনেকেই শিখতে পেরেছেন খতিয়ান এর বিস্তারিত। চলুন দেরী না করে চলে যাই মূল টপিকে।জরিপের প্রাথমিক সময়ে আসল খতিয়ানে যে কপি বা অনুলিপি জমির মালিককে দেয়া হয় তাকে পর্চা বলে। অথবা যখন জরিপ সমাপ্ত হয় তখন সর্বশেষ রেকর্ড প্রকাশিত হওয়ার পর মালিকানার বিবরণ সম্পর্কিত খতিয়ান।কিন্তু জরিপের প্রথমদিকে জমির মালিকে যে আসল মালিকানা বিবরণী দেওয়া হয় তাকে পর্চা বলে।আশা করি পোস্টটি পড়ে সকলেই কিছু বুঝতে পেরেছে। পরবর্তীতে খতিয়ান এবং পর্চা নিয়ে কোনো মতবিনিময় বা বিভেদ সৃষ্টি হবে না ইনশাল্লাহ। সকলেই এই পোষ্টটি পড়ে জ্ঞান অর্জন করেছেন এটাই আমার অর্জন। জরিপ সংক্রান্ত পরবর্তী পোষ্ট পেতে নিয়মিত আমার পোস্টগুলো পড়তে থাকুন।

আশা করি পোস্টটি পড়ে সকলেই কিছু বুঝতে পেরেছেন। পরবর্তীতে খতিয়ান এবং পর্চা নিয়ে কোনো মতবিনিময় বা বিভেদ সৃষ্টি হবে না ইনশাল্লাহ। সকলেই এই পোষ্টটি পড়ে জ্ঞান অর্জন করেছেন এটাই আমার অর্জন। জরিপ সংক্রান্ত পরবর্তী পোষ্ট পেতে নিয়মিত আমার পোস্টগুলো পড়তে থাকুন।


খতিয়ান এর ব্যাখ্যা+

  1. জে এল নম্বর:
  1. মালিক:
  1.  জমির পরিমাণ:
  1. জমির হিস্যা
  1. জমির শ্রেণী বা ধরন

এখন আমরা এগুলোর বিস্তারিত আলোচনা জানব-
১. জে এল নম্বর:
ছোট হরিণা একটি মৌজা। ছোট হরিনার মতো এমন অসংখ্য দাউদকান্দি উপজেলায় মৌজা রয়েছে। উপজেলার মৌজা বিভিন্ন প্রকারের হতে পারে। উপজেলা মৌজার সংখ্যা একেক রকম। এই মৌজাগুলোকে সহজভাবে চেনার জন্য অনেকগুলো ব্যবস্থা নিতে হয়। একটি উপজেলার সকল মৌজা যেমন একটি পৃথক নাম থাকে ঠিক তেমনি একটি উপজেলার সকল মৌজার একটি পৃথক নম্বর বা ক্রমিক নম্বর থাকে। মৌজার এই ক্রমিক নম্বর কে শুদ্ধ ভাষায় এবং সহজ ভাষায় বলা হয় জে এল নম্বর। জে এল নম্বর এর পূর্ণরূপ আছে জুরিসডিকশন লিস্ট।
২. মালিক:
খতিয়ানের সাধারণত জমির মালিকের নাম থাকে। আপনি যদি কোন একটি ব্যাংক অ্যাকাউন্ট ওপেন করেন তাহলে আপনি সেটির মালিক হবেন। ঠিক তেমনি খতিয়ানেও তার মালিকের বিস্তারিত  বিবরণ থাকে। খতিয়ানের সাধারণত একজন মালিক বা একাধিক মালিকের নাম থাকতে পারে। যদি একটি খতিয়ানে শুধু একজনের নাম থাকে তবে বুঝতে হবে পুরো সম্পত্তির মালিক সে। আর যদি একাধিক মালিক থাকেন তাহলে তাদের হিসাব অনুযায়ী সম্পত্তির ভাগ পাবেন। খতিয়ানে জমির প্রকৃত মালিকের নাম পিতা বা স্বামীর নাম থাকে। পিতা শব্দটি বদলে পিং এবং ঠিকানা শব্দটির বদলে সাং এবং স্বামী শব্দটির বদলে জং লিখা থাকে।ধরি, একজন খতিয়ানে পাঁচজন মালিক এবং প্রত্যেক মালিকের নামের পাশে একটি মুহূর্তে পাঁচটি দাগ আছে। এটি ধরে নেওয়া যাবে না যে, একজন ব্যক্তি শুধুমাত্র তার নামের পাশে থাকা জমির অংশ পাবে। তিনি পাঁচটি দাগের মালিকও হতে পারেন। প্রকৃত মালিক কে খুঁজে বের করতে জমি দখলের বিষয়টি দেখতে হবে। তাহলেই আমরা মালিকানার  স্পষ্ট ধারণা পেয়ে যাব।
3. জমির পরিমাপ:
৪. জমির হিস্যা বা অংশ: 
৫. শ্রেণি: 

সিএস জরিপ,আর এস জরিপ, এস এ জরিপ বলেতে কি বোঝায়?

সাধারণত খতিয়ানে এক বা একাধিক দাগ নম্বর থাকে। স্বাভাবিকভাবেই প্রতিটি দাগের পাশে দাগের জমির পরিমাণ লিখা থাকে। আবার দেখা যায়,খতিয়ানের নিচের অংশে সবগুলো দাগের জমির পরিমাণ দেওয়া থাকে।যদি খতিয়ানে একটি দাগ থাকে তাহলে ওই দাগের পাশে সবগুলো জমির পরিমাণ দেওয়া থাকে আর যদি একাধিক দাগ থাকে তাহলে সবগুলো দাগের মোট জমির পরিমাণ লিখা থাকে।

হিস্যা বলতে-খতিয়ানে যতজন মালিক বা অংশীদার আছেন তাদের প্রত্যেকে ওই খতিয়ানে মোট যে পরিমাণ জমি আছে তার কতটুকু বা কি পরিমাণ জমির মালিক। মনে করি, একটি খতিয়ানে একজন মালিক শাকিল, তাহলে শাকিল একা ঐ খতিয়ানের সকল জমির মালিক।কিন্তু যদি অনেকজন মালিক থাকেনা তাহলে সবার নামের পাশে তিনি কতভাগ জমির মালিক তা লিখা থাকবে ।একে জমির হিস্যা বলে।

একটি মৌজা অনেকগুলো জমি থাকে। সবগুলো জমি বিভিন্ন কাজে  ব্যবহৃত হয়।যেমন কৃষিকাজে, বাড়ি, নদী নালা, খাল বিল, কবরস্থান, মন্দির, মসজিদ এবং পুকুর।

 বিভিন্ন জরিপ এর নীতিমালাঃ

ধাপে ধাপে জরিপগুলো দেখে নেই:

  • সিএস জরিপ (Cadastral survey)
  •  revisional survey (আর এস জরিপ
  • state acquisition survey(এস এ জরিপ)
  • পিএস জরিপ
  • বিএস জরিপ
  • সিটি জরিপ
  • এবং দিয়ারা জরিপ

#1 সিএস জরিপ: 
#২ আর এস জরিপ (revisional survey): 
সিএস জরিপ হয়েছিল আঠার ১৮৮৮ সাল থেকে ১৯৪০ সাল পর্যন্ত। এর দীর্ঘ ৫০ বছর পর আর এস জরিপ সম্পন্ন করা হয়। ভূমি, ভূমির মালিক এবং দখলদার ইত্যাদি সত্যায়িত করার নিমিত্তে আর এস জরিপ করা হয়েছিল। এস এ জরিপের সময় অনেক ত্রুটি বিচ্যুতি রয়ে যায়। এস.এ. জরিপের সময় সরেজমিনে তদন্ত বা জরিপ কার্যক্রম পরিচালনা হয়নি। জমিদারদের থেকে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে এস.এ জরিপ বা খাতিয়ান প্রস্তুত করা হয়েছিল যার কারণে অনেক ত্রুটি-বিচ্যুতি থেকে যায়।  এই ত্রুটি সমাধান করার জন্য আর এস জরিপ করা হয়েছিল।আরএস জরিপে প্রস্তুতকৃত নকশা ও খতিয়ান নির্ভূল হিসেবে গ্রহনীয়।
#৩ এস.এ জরিপ: 
আমরা ইতোমধ্যে জানতে পারলাম যে সি এস ও আর এস জরিপ এর বিস্তারিত। আমরা খুবই ভালভাবে বুঝে গেছি সিএস এবং আর এস জরিপ এর মধ্যে পার্থক্য কি। এখন আমরা জানবো এস এ জরিপের বিস্তারিত। এস এ জরিপ ইংরেজি শব্দ।এস এ জরিপ এর পূর্ণরূপ হচ্ছে-state acquisition survey.
এস এ জরিপ করা হয়েছিল-১৯৫০ সালে জমিদারি অধিগ্রহণ ও প্রজাস্বত্ব আইন বাস্তবায়ন হওয়ার পর সরকার ও 1956 সালে স্বর্গ পূর্ববঙ্গ জমিদারি অধিগ্রহণের সিদ্ধান্ত নেয় এবং রাতের সাথে সরকারের প্রত্যক্ষ সম্পর্ক স্থাপনের জন্য জমিদার'দের সামান্য ক্ষতিপূরণ নির্ধারণ এবং রাতের খাজনা নির্ধারণ জরিপ করা হয়েছিল খুব দ্রুততার সাথে জমিদারগণ হইতে ফলাফলের উপর নির্ভর করে এই জরিপ বা খতিয়ান করার কার্যক্রমে পরিচালিত হয়েছিল।আমরা বলতে পারি উন 1950 সাল থেকে 1956 সালেমধ্যে এস এ জরিপ তৈরি হয়েছিল।কিন্তু এই জরিপে কিছু ভুল ত্রুটি থেকে যায়।যার ফলে পরবর্তীতে আর এস জরিপ করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।
#4 পি এস জরিপ: 
1957 সাল থেকে 1962 সাল পর্যন্ত এই জরিপ পরিচালিত হয়েছিল।

“সিএস” হলো Cadastral Survey (CS) এর সংক্ষিপ্ত রূপ। একে ভারত উপমহাদেশের প্রথম জরিপ বলা হয় যা ১৮৮৮ (ভূমি মন্ত্রণালয় অুনসারে ১৮৮৭) সাল হতে ১৯৪০ সালের মধ্যে পরিচালিত হয়। এই জরিপ ১৮৮৫ সালের বঙ্গীয় প্রজাতন্ত্র আইনে বাংলাদেশের সকল ভূমির বিস্তারিত ম্যাপ তৈরি করার এবং প্রতিটি মালিকের জন্য দাগ নম্বর উল্লেখ পূর্বক খতিয়ান তৈরি করার বিধান করা হয় সিএস জরিপে। সিএস জরিপ পরিচালিত হয় ১৮৮৮ সাল হতে ১৯৪০ সালের মধ্যে ‌।সিএস জরিপ ভারত উপমহাদেশের প্রথম জরিপ ছিল। এ জরিপ পি-70 সিটে কিস্তোয়ার এর মাধ্যমে সম্পন্ন হয়। কক্সবাজারের রামু থানা থেকে  স্টার্ট হয়ে দিনাজপুরে সিএস জরিপ  স্থগিত  হয়। সিএস জরিপ কৃত নকশা কে সিএস ম্যাপ এবং খতিয়ানকে সিএস খতিয়ান বলা হয়।


 ১৮৮৮ সাল থেকে  ১৯৪০ সাল পর্যন্ত এর মধ্যে সিলেট জেলা আসাম প্রদেশের অধীনে থাকায় সিলেট জেলায় সিএস জরিপ হয়নি।তবে জরুরী বিবেচনায় ১৯৩৬ সালের সিলেট প্রজাস্বত্ব আইনের (Sylhet tenancy Act) আওতায় সিলেট জেলার ক্যাডাষ্ট্রাল সার্ভে ১৯৫০ সালে আরম্ভ করা হয় এবং পরবর্তীতে রাষ্ট্রীয় অধিগ্রহন ও প্রজাস্বত্ব আইন ১৯৫০ এর অধীনে ঐ জরিপ ১৯৬৩ সালে শেষ হয়। জমিদারগনের নাম খতিয়ানের উপরিভাগে এবং দখলকার রায়তের নাম খতিয়ানের নিচে লেখা হতো। এই জরিপটি ছিল বাংলার জমিনে প্রথম এবং সঠিক জরিপ। এটি এখনো সঠিকভাবে ব্যবহার করা হয়। এই জরিপটির অর্থাৎ আসে জরিপের গঠন যোগ্যতা অনেক বেশি। মামলায় বা ভূমির জটিলতা নিরসনের ক্ষেত্রে এই জরিপকে বেস হিসেবে অনেক সময় গণ্য করা হয়।


পিএস জরিপের পূর্ণরূপ হচ্ছে-Pakistan survey. আমরা ইতিমধ্যে এস এ জরিপ সম্পর্কে জেনেছি।এখন আমরা আবারও নতুন করে এস এ জরিপ এর সাথে পরিচিত হব।সুতরাং সোজাসুজি ভাবে বলতে গেলে, এসএ জরিপ কেই পিএস জড়িপ বলা হয়। পি এস এবং এস এ জরিপ অনেকটা একই ধরনের।

#৫ বিএস জরিপ(Bangladesh Survey):
#৬সিটি জরিপ: 
ধাপে ধাপে আমরা বিভিন্ন জরিপ সম্পর্কে অবগত হলাম। এখনো আমাদের কিছু জরিপ  সম্পর্কে জানার বাকি আছে। তা সাধারণত বেশি দেখা যায় না। চলুন জেনে নেই সিটি জরিপ সম্পর্কে।
ঢাকা মহানগরের আরেক নাম সিটি জরিপ। এই জরিপটি হাজার 1999 থেকে 2000 সালের মধ্যে সম্পন্ন করা হয়। আর এস বা রিভিশনাল সার্ভে এর পর বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক অনুমতিক্রমে এটি করা হয়েছিল। এখন পর্যন্ত যতগুলো জরিপ হয়েছে তার মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ এবং আধুনিক জরিপ। এটিকে আধুনিক জোরিপ বলা হয়েছে কারণ, এটি কম্পিউটার প্রিন্ট করা যায়। তাই জনপ্রিয়তা দিন দিন বেড়েই চলেছে। বাংলার জনগণ এই আশা রেখে সাদরে গ্রহণ করেছে।
আমরা নিশ্চিত ভাবে বুঝতে পেরেছি সিটি জরিপ সম্পর্কে।পোস্টটি পড়ে যদি আপনি একটু উপকৃত হন তাহলে আমাকে কমেন্ট করুন এবং আপনার সমস্যাগুলো আমাকে জানান। আপনাদের উত্তর দেওয়ার জন্য প্রস্তুত আছি।
অনেকগুলো জরিপে জানলাম আরো কিছু জরিপ আছে তা আমরা এখনো জানবো। চলুন জেনে নেই পরবর্তী জরিপ সম্পর্কে।
#৭ দিয়ারা জরিপ: 
আমরা এখনো জানবো দিয়ারা জরিপ এর বিস্তারিত আলোচনা।দিয়ারা জরিপ কি আমরা অনেকেই জানিনা। জানতে পোস্টটি ভাল করে মনোযোগ দিয়ে পড়তে থাকুন। চলন আসা যাক আমাদের মূল টপিকে।দিয়ারা সম্পর্কিত জরিপটি হলো দিয়ারা জরিপ।উৎপত্তি হওয়া নতুন ভূমি জেলা প্রশাসকের চাহিদার ভিত্তিতে সৃষ্টির কারণে ভৌগলিক সীমানা ও সত্যের পরিবর্তন হলে নদী ও সমুদ্র উপকূল এলাকায় নতুন জরিপ করা হয়। এরকম জরিপে রেকর্ড প্রস্তুত করা হয়।আমরা পূর্বেই জেনেছি সিএস জরিপ 1888 সালে আরম্ভ হয় এবং দিয়ারা জরিপ আরম্ভ হয় 1862 সালে। সারাদেশে সুনির্দিষ্ট কিছু মৌজা এ জরিপ পরিচালিত হয়েছিল।

বিএস জরিপ হলো মূলত বাংলাদেশ সাভে এর সংক্ষিপ্ত রূপ। ১৯৫০ সালের জমিদারি অধিগ্রহণ ও প্রজাস্বত্ব আইন অনুযায়ী এই জরিপ কায পরিচালিত হয়। ১৯৯৮ সাল হতে বতমানে চলমান জরিপকে বিএস খতিয়ান বা সিটি বলা হয়। যাহা এখনো সারা দেশে চলমান। শুধুমাত্র ঢাকা মহানগরীতে বিএস খতিয়ানকে সিটি জরিপ বলা হয়। এই সিটি জরিপের আরেক নাম ঢাকা মহানগর জরিপ।আর এস জরিপের পর বাংলাদেশ সরকার ১৯৯৮ সাল থেকে এ জরিপের উদ্যোগ নেয়, এ যাবৎকালে এটিইকে আধুনিক জরিপ বলা হয়।

পর্চা। পর্চা বলতে কী বোঝায়?

পর্চা বলতে কি বুঝায়

#পর্চা:

খতিয়ান এবং পর্চার মধ্যে অনেক লোকই পার্থক্য বুঝতে পারে না। পূর্বের পোস্ট গুলোতে আমরা খুব সাধারণভাবে আর খতিয়ান সম্পর্কে জেনেছি। পূর্বের পোস্ট গুলোতে আমি চেষ্টা করেছি খুব সহজ এবং কার্যকরী খতিয়ান সম্পর্কে আলোচনা করতে। এই পোস্টটি পড়ে আপনারা অনেকেই শিখতে পেরেছেন খতিয়ান এর বিস্তারিত। চলুন দেরী না করে চলে যাই মূল টপিকে।জরিপের প্রাথমিক সময়ে আসল খতিয়ানের যে কপি বা অনুলিপি জমির মালিককে দেয়া হয় তাকে পর্চা বলে। অথবা যখন জরিপ সমাপ্ত হয় তখন সর্বশেষ রেকর্ড প্রকাশিত হওয়ার পর মালিকানার বিবরণ সম্পর্কিত খতিয়ান।কিন্তু জরিপের প্রথমদিকে জমির মালিকে যে আসল মালিকানা বিবরণী দেওয়া হয় তাকে পর্চা বলে।

আরো  সহজভাবে,ভূমি জরিপকালে চূড়ান্ত প্রস্তত করার পূর্বে ভূমি মালিকদের নিকট খসড়া খতিয়ানের যে অনুলিপি ভুমি মালিকদের প্রদান করা হয় তাকে “মাঠ পর্চা” বলে। এই মাঠ পর্চা রেভিনিউ/রাজস্ব কর্তৃক তসদিব বা সত্যায়ন হওয়ার পর যদি কারো কোন আপত্তি থাকে তাহলে তা শোনানির পর চুড়ান্তভাবে প্রকাশ করা হয়। আর চুড়ান্ত খতিয়ানের অনুলিপিকে “পর্চা” বলে।

আশা করি, পোস্টটি পড়ে সকলেই কিছু বুঝতে পেরেছে। পরবর্তীতে খতিয়ান এবং পর্চা নিয়ে কোনো মতবিনিময় বা বিভেদ সৃষ্টি হবে না ইনশাল্লাহ। সকলেই এই পোষ্টটি পড়ে জ্ঞান অর্জন করেছেন এটাই আমার অর্জন। জরিপ সংক্রান্ত পরবর্তী পোষ্ট পেতে নিয়মিত আমার পোস্টগুলো পড়তে থাকুন।আশা করি পোস্টটি পড়ে সকলেই কিছু বুঝতে পেরেছেন। পরবর্তীতে খতিয়ান এবং পর্চা নিয়ে কোনো মতবিনিময় বা বিভেদ সৃষ্টি হবে না ইনশাল্লাহ। সকলেই এই পোষ্টটি পড়ে জ্ঞান অর্জন করেছেন এটাই আমার অর্জন। জরিপ সংক্রান্ত পরবর্তী পোষ্ট পেতে নিয়মিত আমার পোস্টগুলো পড়তে থাকুন।

The type of property




সম্পত্তি বলতে শুধুমাত্র মালিকানার বিষয়বস্তুকে বুঝায় না, বরং মালিকানার বা তার আংশিক মালিকানার অধিকারকেও বুঝায়। বাংলাদেশের সংবিধানের ১৫২ অনুচ্ছেদে সম্পত্তির ব্যাখ্যা প্রদত্ত হয়েছে। সংবিধানের ব্যাখ্যা অনুযায়ী সম্পত্তি বলিতে সকল স্থাবর ও অস্থাবর, বস্তুগত ও নির্বস্তুগত সকল প্রকার সম্পত্তি, বাণিজ্যিক ও শিল্পগত উদ্যোগ এবং অনুরূপ সম্পত্তি বা উদ্যোগের সহিত সংশ্লিষ্ট যে কোন স্বার্থ বা অংশ অন্তর্ভুক্ত হইবে।”

অর্থাৎ কোন ব্যক্তি বা স্বত্ত্বা কর্তৃক অর্জিত কোন কিছুই হলো সম্পত্তি। সম্পত্তি বাস্তব বা পরাবাস্তব/অবাস্তব হতে পারে। বাস্তব সম্পত্তি স্পর্শযোগ্য যেমন জমি, বাড়ি, টাকা ইত্যাদি; অবাস্তব সম্পত্তি স্পর্শযোগ্য নয় যেমন কোন অধিকার বা কোন ব্যবসার সুনাম (Goodwill)।

সম্পত্তি হস্তান্তর আইনে “সম্পত্তির কোন সংজ্ঞা প্রদত্ত হয়নি। শংকর লাল বনাম গণেশ প্রসাদ মোকদ্দমার রায়ে এলাহাবাদ হাইকোর্ট উল্লেখ করেন যে, সম্পত্তি বলতে শুধুমাত্র বস্তুগত পদার্থকে বুঝায় না; বরং তা বস্তুগত পদার্থের উপর লব্ধ সকল প্রকার অধিকার ও স্বত্বকেও বুঝায়। অপর একটি মামলায় একই আদালত রুলিং প্রদান করেছেন যে, সম্পত্তি’ শব্দটি দ্বারা বন্ধকী-দায় মোচনের ন্যায়সঙ্গত অধিকার (Right of equity of redemption), কায়েমী স্বত্ব (Vested Interest), প্রভৃতি মামলাযোগ্য অধিকারসমূহকে অন্তর্ভুক্ত করে – 29 Cal. 25 

বিভিন্ন প্রকার সম্পত্তি-

  •  চান্দিনা ভিটি
  • সায়রাত মহাল এবং রেজিস্টার 6
  • কোর্ট অব ওয়ার্ডস
  • দেবোত্তর সম্পত্তি
  • ওয়াকফ সম্পত্তি
  • পরিত্যক্ত সম্পত্তি
  • অর্পিত সম্পত্তি
  • 8 নং রেজিস্টার
  • খাস জমি এবং পাবলিক ইজমেন্ট

১. স্থায়ী এবং ২.অস্থায়ী
সাধারণভাবে হাট বাজারের দোকানগুলো এক বছরের জন্য অস্থায়ীভাবে বন্দোবস্ত দেওয়া হয়।
এ ধরনের হাটবাজারের স্থায়ী এবং অস্থায়ী অকৃষি জমির যে অংশ প্রজার প্রতি বরাদ্দ দেয়া হয় তাকে চান্দিনা ভিটি বলে।
২. সায়রাত মহাল এবং রেজিস্টার 6: 
তোমরা অনেকেই সায়রাত শব্দটির সাথে অপরিচিত। এই সায়রাত শব্দটি সচরাচর ব্যবহার করা হয় না। তাই সায়রাত শব্দটির সাথে পরিচিত হতে হলে প্রথমে আমাদের সায়রাত শব্দটির অর্থ বুঝে নিতে হবে। চলুন জেনে নেই সারারাত শব্দের অর্থ।
  • বাস মহাল
  • হাট-বাজার
  • ফেরীগাট বা সোয়ারীঘাট
  • পাথর মহাল
  • খেয়াঘাট বা নৌকার ঘাট
  • বালুমহাল
  • এবং জল মহাল ইত্যাদি।
সহজভাষায় সায়রাত-
সায়রাত অর্থ ভূমি কর ব্যতীত অন্যান্য করের মাধ্যমে সরকারের আয়।যে সমস্ত সাধারন ব্যবহার্য স্থান সমূহ সাময়িক ব্যবহারের জন্য সরকার কোন ব্যক্তি বা ব্যক্তিবর্গ বা প্রতিষ্টানকে বার্ষিক লিজ দিয়ে অথবা 
স্বল্প মেয়াদি লিজ  দিয়ে রাজস্ব আদায়  করেন , তাকে সায়রাত মহল বলে।  এ লীজ দ্বারা সংলিস্ট সম্পত্তির মালিকানা হস্তান্তরিত হয় না।
৩. কোর্ট অব ওয়ার্ডস: 
বন্ধুগণ পূর্বের টপিকে আলোচনা করে আমরা অনেক বিষয় আপনাদের জানিয়েছি।
আশাকরি সকলে খুব সহজে বুঝতে পেরেছেন টপিকগুলো।এখন আমরা জানবো কোর্ট অব ওয়ার্ডস সম্পর্কে জানব।
কোর্ট অব ওয়ার্ডস শব্দটি বুঝতে হলে আমাদের প্রথমে জানতে হবে তা হল এর অর্থ বোঝা।কোর্ট (court) শব্দের অর্থ দেওয়ানী আদালত (Civil  Court) এবং ওয়ার্ডস শব্দের অর্থ রক্ষণাবেক্ষণকারী অভিভাবক।অর্থাৎ  কোর্ট অব ওয়ার্ডস বলতে বুঝতে পারি অন্যের সম্পত্তি রক্ষণাবেক্ষণ করা।
এখন আমরা জানবো কোর্ট অব ওয়ার্ডস এর বিস্তারিত তথ্য। 1793 সালে ব্রিটিশরা চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত প্রথা প্রবর্তিত করে।ফলাফলস্বরূপ জমিদারদের অনুকূলে চিরকাল জমি বন্দোবস্ত দেওয়ার প্রেক্ষিতে জমিদারগণ বংশধারায়  জমি ভোগের অধিকার পায়।
কিন্তু এখানে একটি সমস্যার সম্মুখীন হতে হয় জমিদারদের কে। সমস্যাটি হচ্ছে-জমিদারি পরিচালনায় অক্ষম বা অপরিপক্ক মহিলা সরকার ঘোষিত অপ্রাপ্তবয়স্ক জমিদার দেওয়ানী আদালত গঠিত মানসিকভাবে অপ্রকৃতিস্থ ও পরিচালনায় অক্ষম অথবা শারীরিক অসমর্থতা অঙ্গহানি প্রভৃতি কারণে অপারক এবং সরকার বিবেচিত অপারগ এরূপ জমিদারদের জমিদারি পরিচালনার জন্য সরকারিভাবে অভিভাবকত্বের প্রয়োজন দেখা দেয়।ফলাফল স্বরূপ সমস্যা সমাধানের জন্য বিভিন্ন পদ্ধতি আলোচিত হয়। এই পদ্ধতির বিভিন্ন রকম সমালোচনা করা হয়।
ব্রিটিশ সরকারের আমলে 1879 সালের 30 জুলাই কোর্ট অফ ওয়ার্ডস আইন কার্যকর হয়। ফলাফলস্বরূপ প্রণীত হয় 1979 সালের কোর্ট অব ওয়ার্ডস আইন।কোর্ট অব ওয়ার্ডস আইন যারা পরিচালনা করে সেই প্রতিষ্ঠান কাজ হচ্ছে-সম্পত্তির হেফাজতকারী কারণ হিসেবে দায়িত্ব পালন করা।যারা নিজেদের সম্প্রতি হেফাজত করতে পারে না তারা কিছু নিয়মকানুন মেনে দলিলের মাধ্যমে কোর্ট অব ওয়ার্ডস এর কাছে সম্পত্তি অর্পণ করতে পারবেন।কিন্তু আপনারা এটা ভাববেন না যে সম্পত্তির মালিকানা সরকার হয়ে যাবে! তা কখনোই নয়। সরকার শুধু সম্পত্তির দেখভাল করবে এবং আপনার সম্পত্তি নিজের রয়ে যাবে।
পাঠকরা আশাকরি সকলে খুব সহজেই বুঝতে পারছেন আজকের আলোচ্য বিষয়।এখন আমরা চলে যাব আমাদের পরবর্তী ধাপে।
৪.দেবোত্তর সম্পত্তি: 
ইতিপূর্বে আমরা জেনেছি কোর্ট অব ওয়ার্ডস সম্পর্কে। উৎসর্গকৃত সম্পত্তি বা সম্পত্তিকে দেবোত্তর সম্পত্তি বলে।হিন্দু ধর্মের মতে,ধর্মীয় কাজের জন্য অর্থাৎ, মন্দির ,শ্মশান, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান পরিচালনা এবং ধর্মীয় উপাসনালয় ইত্যাদি যে সম্পত্তি উৎসর্গ করা হয় তাকে দেবোত্তর সম্পত্তি বলা হয়।যে ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান দেবোত্তর সম্পত্তি পরিচালনা দেখাশোনা করেন তাকে  সেবাইত বলা হয়। ভূমি মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন এক বা একাধিক ট্রাস্টিবোর্ডের দ্বারা দেবোত্তর সম্পত্তির পরিচালনা করা হয় বা পরিচালিত হয়।
৫. ওয়াকফ সম্পত্তি:
ইসলামী বিধান অনুসারে, ধর্মীয় কাজে কোন ভবন, সম্পদ, ভূমি ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের তৈরি করার উদ্দেশ্যে দান করাকে ওয়াকফ বলে। ওয়াকফকৃত সম্পত্তি কে ওয়াকফ সম্পত্তি বলে।যেসব সম্পদ ওয়াকফ করা হয়, তা সাধারণত ট্রাস্টি বোর্ডের মাধ্যমে পরিচালিত হয়।যখন কোন উপযুক্ত মুসলিম ব্যক্তি সম্পূর্ণ সুস্থ থেকে সুস্থ মস্তিষ্কে তা বৈধ বা নিজের মালিকানার সম্পত্তিকে ধর্মীয়  দাতব্য দুষ্ট মানবতার সেবায় ইত্যাদি সারা জীবনের জন্য উৎসর্গ করেন তাকে ওয়াকফ সম্পত্তি বলে। যে ব্যক্তি বা ব্যক্তিবর্গ কোন সম্পত্তি দান করেন তাকে ওয়াকিফ বলা  হয়। ওয়াকফ সম্পত্তি পরিচালনার জন্য যিনি নিয়োজিত হন তাকে মোতাওয়াল্লী বলে।বিশেষ করে কোন অমুসলিম ব্যক্তি ওয়াকফ  সম্পত্তি দান করতে পারেন।
ওয়াকফ সম্পত্তি পরিচালনার জন্য ওয়াকফ প্রশাসক নিয়োগ করা হয়।
৬. পরিত্যক্ত সম্পত্তি: 
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ চলাকালীন সময়ে যারা পশ্চিম পাকিস্তান নি সেনাবাহিনীকে সাহায্য সহযোগিতা করেছিল, পাকিস্তান সরকারের সাথে হাত মিলিয়ে ছিল এবং স্বাধীনতা অর্জনের পর তাদের সকল সম্পত্তি ত্যাগ করে এ দেশ হতে পলায়ন করে বা আত্মগোপন করে অনুপস্থিত থাকে এবং যারা নিজের সম্পত্তি তত্ত্বাবধায়ন করেনি বা অক্ষম হয়ে পড়ে তাদের সম্পত্তিকে পরিত্যক্ত সম্পত্তি হিসেবে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।
আরো কিছু জানতে চাইলে সাথে থাকুন:

১. চান্দিনা ভিটি:

ধরি, খালিশা একটি ছোট বাজার। খালিশা বাজারে আমরা দুই ধরনের দোকানপাট  দেখে থাকি।

সায়রাত শব্দের অর্থ হচ্ছে ভূমি উন্নয়ন কর ব্যতীত অন্যান্য বিভিন্ন কর।অর্থাৎ সাধারণভাবে ভূমির মধ্যে যে কর আরোপ করা হয় তা থেকে ভিন্ন একটি কর হচ্ছে সারারাত কর। আশাকরি সকলে খুব সহজে সারা সম্পর্কে বুঝতে পেরেছি।এখন আমরা এর বিষয়ে বিস্তারিত জানব। এমন কিছু সম্পত্তি আছে, যা সরকার ইজারা দেয় এবং এর সাহায্যে বিভিন্ন কর আদায় করে। নিম্নে সায়রাত মহাল সম্পত্তির কিছু উদাহরণ দেওয়া হল-

এখন প্রশ্ন হচ্ছে কিভাবে আমরা জানবো ভূমিটি সায়রাত অন্যান্য সম্পত্তির মধ্যে পড়েছে। খুব সহজে তা আমরা জানতে পারি। ভূমি সংক্রান্ত যাবতীয় তথ্য জানতে আমাদের ভূমি অফিস সাহায্য করে। ভূমি অফিস থেকে আমরা সায়রাত মহাল সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পারবো। সায়রাত মহাল এর তথ্যাদি ভূমি অফিসে রক্ষিত রেজিস্টার 6 হতে পাওয়া যায়। রেজিস্টার 6 ভূমি অফিসের অন্তর্গত সব সায়রাত মহাল এর তফসিল, ইজারাদার এর নাম, কত সময়ের জন্য ইজারা নেওয়া হয়েছে এবং কি প্রকারের চালানে সরকারি কোষাগারে অর্থ জমা প্রদান করা হয়েছে ইত্যাদি তথ্য লিপিবদ্ধ থাকে। সুতরাং তোমরা খুব সহজে বিষয়টি বুঝতে পেরেছ। শিখতে চাও তাহলে পরের অনুচ্ছেদ পড়তে থাকুন।আমি আপনাদের জন্য তৈরি করেছি এই পোস্টটি। অবশ্যই কিছু না কিছু আপনাদের সাহায্য করবে এই পোস্টটি পড়ার পর।

ওয়াকফ সম্পর্কে বুঝতে হলে আমাদের প্রথমে জানতে হবে ওয়াকফ শব্দের অর্থ কি? ওয়াকফ একটি আরবী শব্দ। যার অর্থ খুব সুন্দর।এর সমার্থক শব্দ হচ্ছে হাবুস।ওয়াকফ হাবুস নামে পরিচিত।

আমরা সকলেই জানি 1971 সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ হয়। এই যুদ্ধে ৩০ লক্ষ ব্যক্তি বর্গ গন শহীদ হয়েছিলেন। তাদেরকে খুব নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। এই শহীদ হওয়ার পেছনে দায়ী ছিল দেশীয় রাজাকার আলবদর ,আলশামস বাহিনীর। অবশেষে বাংলাদেশে বিজয় অর্জন করেছিল।

আমরা জানি,কোন মৌজার খতিয়ান নম্বর ১ হতে শুরু হয়।মৌজার রেকর্ডের ভলিউম খুললে প্রথমেই যে খতিয়ান দেখা যায় সেটি হলো ১নং খতিয়ান।এ খতিয়ানের মালিকের অংশে কোনো ব্যক্তির নাম লেখা থাকবে না।এর বদলে লেখা থাকবে , বাংলাদেশ সরকার এর পক্ষে জেলা প্রশাসক ও জেলার নাম। উক্ত খতিয়ানে যেসকল দাগ নম্বর থাকবে ও সে দাগের পাশে যে জমির পরিমাণ লিখা থাকে সে সকল জমিই খাস জমি।

তবে এটা মনে রাখতে হবে যে, 1 নং দাগ  খাস  জমি নয়। 1 নং খতিয়ান হল খাস জমি। অতি সহজে বুঝতে চাইলে, আমরা এটাও বলতে পারি, সম্পূর্ণভাবে সরকারের হাতে ব্যস্ত ও গভমেন্টের নিয়ন্ত্রণাধীন ভূমি খাস জমি। আবার এটা ভেবে নেওয়া যাবেনা যে সরকারি দপ্তরের বা সরকারি অফিসের যে সম্পদগুলো এগুলো সবই খাস জমি। এটা কখনোই সত্য নয়। যেমন-গভমেন্ট অফিস, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বাজে কত ধরনের গভমেন্টের প্রতিষ্ঠান জমি খাস জমি নয়, আমরা গভমেন্টের জমি বলে থাকি।

তাহলে আমরা বলতে পারি যে শুধু এক নং খতিয়ানভুক্ত জমি গুলো বা দাগ গুলো খাস জমি।

আমরা এটা সকলে জানি খাস জমির জন্য কোন সরকারি কর ধার্য করা হয় না। কিন্তু গভারমেন্ট বা সরকারি জমির জন্য সরকারি কর দারজো করা হয়। এখন আমাদের মাথায় একটি প্রশ্ন জাগছে সরকারি জমি  আমরা কিভাবে চিনতে পারব? সরকারি জমি গুলো খুঁজে পেতে আমাদের 2 নং খতিয়ানে দেখতে হবে।সাধারণত 2 নং খতিয়ানের জমি  সরকারি জমি হয় থাকে। আমরা জানি, খাস জমির ভূমি উন্নয়ন কর প্রদান করতে হয় না। কিন্তু সরকারি জমির জন্য ভূমি উন্নয়ন কর পরিশোধ করতে হয়।সরকারি জমি গুলো সম্পর্কে জানতে চাই তাহলে রেকর্ড ভলিয়মে 2 নং খতিয়ান থেকে বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠানের জমির রেকর্ড দেখতে পারবো।
কিভাবে খাস জমি চিনব:
প্রায় সময় আমরা দেখতে পাই যে,পূর্বের জরিপে অর্থাৎ এস এ জরিপে কোন দাগের জমি 1 নং খাস খতিয়ান ভুক্ত ছিল কিন্তু পরবর্তী জরিপে তা ব্যক্তিমালিকানাজয় রেকর্ড হয়েছে। চলুন জেনে নিই বিস্তারিত। পদুয়া মৌজা 24৫ দাগের পাশে খতিয়ান নম্বর 46 এবং জমির পরিমাণ 20 শতক লেখা আছে। পাশের কলামে 245 এর সাবেক দাগ হিসেবে একশত 56 এবং জমির পরিমাণ 20% লেখা আছে। এস এ রেকর্ড এর দাগ সূচিতে  যদি হালদাগ 156 এর পাশে খতিয়ান নম্বর এক লেখা থাকে তাহলে বুঝতে হবে যে বর্তমান জরিপের 245 দাগটি পূর্বের জরিপে 1 নং খতিয়ানভুক্ত ছিল।
পাবলিক ইজমেন্ট
কোন মৌজা যে সকল খাস জমি জনগণ বিভিন্ন কাজে ব্যবহার করে থাকেন তাকে আমরা সাধারণত পাবলিক ইজমেন্ট জমি বা জনগণের ব্যবহৃত জমি বলে আখ্যায়িত করে। উদাহরণস্বরূপ-
১.হালট
২.নদী
৩.খাল
৪.রাস্তা
৫.বিল ও
৬.গোপাট ইত্যাদি।
কোন মৌজার 1 নং রেজিস্টার 11 নং বলিয়মের প্রথমদিকে ওই মৌজা সকল পাবলিক ইজমেন্ট বা জনগণের ভূমি জমির তালিকা থাকে। এছাড়াও খাসজমি হওয়ার কারণে 1 নং খতিয়ান ও পাবলিকে ভক্ত জমির দাগ সমূহ লিপিবদ্ধ থাকে।
৮.আট নং রেজিস্টার:
 8 নং রেজিস্টার বলতে আমরা অনেকই অজ্ঞাত নয়. 8 নম্বর রেজিস্টার কী তা আমরা অনেকেই বুঝি না। চলুন শিখে নেই ৮ নং রেজিস্টার বলতে কি বুঝায়? 8 নং রেজিস্টার ভূমি অফিসের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ এবং প্রয়োজনীয়। অনেকে জেনে থাকবেন ৮নং রেজিস্টারকে খাস জমির রেজিস্টার বলা হয়। চলুন আজকে শিখে নেব খুব সহজেই।সরকারি নীতিমালা অনুযায়ী যে সকল খাস জমি বন্দোবস্ত দেয়া হয় তাকে বন্দোবস্তযোগ্য খাসজমি বলে। আবার সামান্য কিছু জমি আছে যা জনগণ ব্যবহার করে থাকে। এসব জমি গুলোকে বলা হয় অভ্যস্ত জমি। আবার কিছু  খাস জমি রয়েছে যা সরকার ক্রয় করে। অন্যথায় পরিত্যক্ত হওয়ার কারণে খাসজমি পরিণত হয়। এছাড়াও কিছু কিছু জমি আছে যা অজ্ঞতাবশত বা প্রাকৃতিক কারণে নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যায়। এ ধরনের জমিকে সাধারণত সিকস্তি জমি বলা হয়।যখন কোনো জমি নদীগর্ভে বিলীন হওয়ার পর আবার পুনরায় জেগে ওঠে যাকে আমরা সাধারনত  সাধারণত পয়স্তি জমি বলি।
8 নং রেজিস্টার চার প্রকার হয়ে থাকে বা চারটি অংশে বিভক্ত থাকে। প্রথম অংশে অবন্দোবস্তযোগ্য খাস জমি, দ্বিতীয় অংশে বন্দোবস্তযোগ্য খাস জমি, দ্বিতীয় অংশে সরকার কর্তৃক ক্রয় করা জমি এবং চতুর্থ অংশে নদী সিকস্তি খাস জমি তথ্য লিপিবদ্ধ থাকে।
৯.অর্পিত সম্পত্তি: 
সম্পত্তিগুলো কোন তফসিলভুক্ত তা আপনি কিভাবে জানবেন? ক ও খ তফসিল এর জন্য পৃথক গেজেট রয়েছে। পূর্বের দাগ যে  মৌজায় অবস্থিত সেই মোজার অর্পিত সম্পত্তির গেজেট তালিকা যাচাই করলে ক তফসিলভুক্ত তা যাচাই করা যায়। এছাড়াও  ভূমি অফিসে অর্পিত সম্পত্তি একটি আদমশুমারি তালিকা রয়েছে। সেই তালিকা দেখলো সম্পত্তি কখনো অর্পিত ছিল কিনা তা জানতে পারবেন।

খাস জমি দেখতে হলে প্রথমে আমাদেরকে ওই মজার এক নম্বর রেকর্ড ভলিয়মের সূচি দেখতে হবে। দাগ সূচিতে যদি ওই দাগের পাশে এক 1 নং খতিয়ান লেখা থাকে তাহলে আমরা বলবো ওই দাগের জমি খাস জমি । এরপর পরবর্তী ধাপ হচ্ছে, ওই মৌজার 1 নং খতিয়ান যাচাই করলে দেখা যাবে দাগটি সেখানে লেখা আছে। একটি দাগের সকল জমি খাস জমি হতে পারে আবার কিছু জমি খাস এবং কিছু জমি ব্যক্তিমালিকানায় থাকতে পারে। চলুন জেনে নেই আরো বিস্তারিত। মনে করি পদুয়া মৌজা দাগ সূচিতে 355 দাগের পাশে খতিয়ান নম্বর এবং জমির পরিমাণ 30 শতাংশ লেখা আছে। তারপরে লাইনে ৩৫৫ একটি আবার লেখা এবং তার পাশে খতিয়ান নম্বর ২০৫ ও জমির পরিমাণ 20 শতাংশ লেখা আছে। তাহলে আমরা খুব সহজেই বুঝতে পারছি যে, পদুয়া মৌজায় ৩৫৫ দাগের মোট জমির পরিমাণ ৫০ শতাংশ।৫০ শতাংশ জমির মধ্যে ৩০ শতাংশ সরকারি খাস খতিয়ান ভুক্ত জমি ।১৫ শতাংশ জমি ব্যক্তি মালিকানাধীন জমি।এতসব পদ্ধতি অবলম্বন করার পরও আমাদের খাস জমি নিয়ে আরো দুর্বিপাকে পড়তে হয়। অনেক সমস্যায় পড়তে হয়।চলুন জেনে নিই খাসজমি সম্পর্কে আরো অন্যান্য সমস্যা গুলো যা আমরা সমাধান করে দেখাবো।

১৯৬৫ সালের  পাক-ভারত যুদ্ধের সময় (6 সেপটেম্বর 1965 হতে 16 ফেব্রুয়ারি 1969 পর্যন্ত) যেসব নাগরিক পূর্ব পাকিস্তান ত্যাগ করে ভারত গমন ও অবস্থান করেন বা এর পূর্বে যেকোনো সময় ভারত ভ্রমণ করে যুদ্ধের সময় ভারতে অবস্থান করা অবস্থান করে তাদের সম্পত্তি পাকিস্তান প্রতিরক্ষা অধ্যাদেশ 1965 এর মাধ্যমে শত্রু সম্পত্তি হিসেবে ঘোষণা করা হয় এবং 1974 সালে সম্পত্তির নাম দেয়া হয় অর্পিত সম্পত্তি।আমরা সকলেই জানি অর্পিত সম্পত্তি কে দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছে ,ক তফসিলভুক্ত জমি ও খ তফসিলভুক্ত জমি। ক তফসিলভুক্ত সম্পত্তি হলো সেই সম্পত্তি যা সরকারি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে এবং সরকারী বিধি মোতাবেক ইজারা প্রদান করেছে। খ তফসিলভুক্ত সম্পত্তি হলো সে সম্পত্তি যা সরকারের নিয়ন্ত্রণে নেই এবং সরকার কখনো বিধি মোতাবেক ইজারা প্রদান করেন নাই।



No comments

Theme images by Jason Morrow. Powered by Blogger.