সম্পত্তির প্রকারভেদ। সম্পত্তির ধরন। বিভিন্ন প্রকার সম্পত্তি।
The type of property |
সম্মানিত পাঠকরা, আসসালামু আলাইকুম।আশাকরি সকলে ভালো আছেন।বরাবরের মতো আমার আরও টিউটোরিয়ালটি নিয়ে আবারো হাজির হয়েছি আপনাদের কাছে।আমি আপনাদের সুবিধার জন্য জরিপ সংক্রান্ত একটি পোস্ট করেছিলাম যার বদৌলতে একাধারে জরিপের সব বিষয় নিয়ে বিষয়গুলো নিয়ে পোস্ট করতে থাকি।
আশা করি সকলেরই পোস্টগুলো অনেক ভালো লেগেছে। আমার এই ওয়েবসাইটের মাধ্যমে আপনারা খুব সহজেই নতুন কিছু জানতে পারবেন এবং খুব সহজেই শিখতে পারবেন। আপনাদের একমাত্র সেখানোর উদ্দেশ্যেই আমার পোস্টগুলো করা হয়ে থাকে।তাই আমি চেষ্টা করি বিস্তারিতভাবে আপনাদের কিছু বোঝাতে। চলুন আজকের মূলটপিকে চলে যাওয়া যাক। আজকে আমরা আলোচনা করব বিভিন্ন প্রকার সম্পত্তি নিয়ে। আমরা অনেকেই জানিনা সম্পত্তির প্রকারভেদ সম্পর্কে। এই পোস্টটি যদি আপনারা মনোযোগ দিয়ে পড়ে থাকেন তাহলে অবশ্যই বুঝতে পারবেন সম্পত্তির প্রকারভেদ। ধাপে ধাপে আপনাদের আমি বিস্তারিত ভাবে বুঝিয়ে দেবো সম্পত্তির প্রকারভেদ গুলো।
সম্পত্তি বলতে শুধুমাত্র মালিকানার বিষয়বস্তুকে বুঝায় না, বরং মালিকানার বা তার আংশিক মালিকানার অধিকারকেও বুঝায়। বাংলাদেশের সংবিধানের ১৫২ অনুচ্ছেদে সম্পত্তির ব্যাখ্যা প্রদত্ত হয়েছে। সংবিধানের ব্যাখ্যা অনুযায়ী সম্পত্তি বলিতে সকল স্থাবর ও অস্থাবর, বস্তুগত ও নির্বস্তুগত সকল প্রকার সম্পত্তি, বাণিজ্যিক ও শিল্পগত উদ্যোগ এবং অনুরূপ সম্পত্তি বা উদ্যোগের সহিত সংশ্লিষ্ট যে কোন স্বার্থ বা অংশ অন্তর্ভুক্ত হইবে।”
অর্থাৎ কোন ব্যক্তি বা স্বত্ত্বা কর্তৃক অর্জিত কোন কিছুই হলো সম্পত্তি। সম্পত্তি বাস্তব বা পরাবাস্তব/অবাস্তব হতে পারে। বাস্তব সম্পত্তি স্পর্শযোগ্য যেমন জমি, বাড়ি, টাকা ইত্যাদি; অবাস্তব সম্পত্তি স্পর্শযোগ্য নয় যেমন কোন অধিকার বা কোন ব্যবসার সুনাম (Goodwill)।
সম্পত্তি হস্তান্তর আইনে “সম্পত্তির কোন সংজ্ঞা প্রদত্ত হয়নি। শংকর লাল বনাম গণেশ প্রসাদ মোকদ্দমার রায়ে এলাহাবাদ হাইকোর্ট উল্লেখ করেন যে, সম্পত্তি বলতে শুধুমাত্র বস্তুগত পদার্থকে বুঝায় না; বরং তা বস্তুগত পদার্থের উপর লব্ধ সকল প্রকার অধিকার ও স্বত্বকেও বুঝায়। অপর একটি মামলায় একই আদালত রুলিং প্রদান করেছেন যে, সম্পত্তি’ শব্দটি দ্বারা বন্ধকী-দায় মোচনের ন্যায়সঙ্গত অধিকার (Right of equity of redemption), কায়েমী স্বত্ব (Vested Interest), প্রভৃতি মামলাযোগ্য অধিকারসমূহকে অন্তর্ভুক্ত করে – 29 Cal. 25 ।
বিভিন্ন প্রকার সম্পত্তি-
- চান্দিনা ভিটি
- সায়রাত মহাল এবং রেজিস্টার 6
- কোর্ট অব ওয়ার্ডস
- দেবোত্তর সম্পত্তি
- ওয়াকফ সম্পত্তি
- পরিত্যক্ত সম্পত্তি
- অর্পিত সম্পত্তি
- 8 নং রেজিস্টার
- খাস জমি এবং পাবলিক ইজমেন্ট
১. চান্দিনা ভিটি:
ধরি, খালিশা একটি ছোট বাজার। খালিশা বাজারে আমরা দুই ধরনের দোকানপাট দেখে থাকি।
১. স্থায়ী এবং ২.অস্থায়ী
সাধারণভাবে হাট বাজারের দোকানগুলো এক বছরের জন্য অস্থায়ীভাবে বন্দোবস্ত দেওয়া হয়।
এ ধরনের হাটবাজারের স্থায়ী এবং অস্থায়ী অকৃষি জমির যে অংশ প্রজার প্রতি বরাদ্দ দেয়া হয় তাকে চান্দিনা ভিটি বলে।
২. সায়রাত মহাল এবং রেজিস্টার 6:
তোমরা অনেকেই সায়রাত শব্দটির সাথে অপরিচিত। এই সায়রাত শব্দটি সচরাচর ব্যবহার করা হয় না। তাই সায়রাত শব্দটির সাথে পরিচিত হতে হলে প্রথমে আমাদের সায়রাত শব্দটির অর্থ বুঝে নিতে হবে। চলুন জেনে নেই সারারাত শব্দের অর্থ।
- বাস মহাল
- হাট-বাজার
- ফেরীগাট বা সোয়ারীঘাট
- পাথর মহাল
- খেয়াঘাট বা নৌকার ঘাট
- বালুমহাল
- এবং জল মহাল ইত্যাদি।
সায়রাত অর্থ ভূমি কর ব্যতীত অন্যান্য করের মাধ্যমে সরকারের আয়।যে সমস্ত সাধারন ব্যবহার্য স্থান সমূহ সাময়িক ব্যবহারের জন্য সরকার কোন ব্যক্তি বা ব্যক্তিবর্গ বা প্রতিষ্টানকে বার্ষিক লিজ দিয়ে অথবা
স্বল্প মেয়াদি লিজ দিয়ে রাজস্ব আদায় করেন , তাকে সায়রাত মহল বলে। এ লীজ দ্বারা সংলিস্ট সম্পত্তির মালিকানা হস্তান্তরিত হয় না।
সায়রাত শব্দের অর্থ হচ্ছে ভূমি উন্নয়ন কর ব্যতীত অন্যান্য বিভিন্ন কর।অর্থাৎ সাধারণভাবে ভূমির মধ্যে যে কর আরোপ করা হয় তা থেকে ভিন্ন একটি কর হচ্ছে সারারাত কর। আশাকরি সকলে খুব সহজে সারা সম্পর্কে বুঝতে পেরেছি।এখন আমরা এর বিষয়ে বিস্তারিত জানব। এমন কিছু সম্পত্তি আছে, যা সরকার ইজারা দেয় এবং এর সাহায্যে বিভিন্ন কর আদায় করে। নিম্নে সায়রাত মহাল সম্পত্তির কিছু উদাহরণ দেওয়া হল-
এখন প্রশ্ন হচ্ছে কিভাবে আমরা জানবো ভূমিটি সায়রাত অন্যান্য সম্পত্তির মধ্যে পড়েছে। খুব সহজে তা আমরা জানতে পারি। ভূমি সংক্রান্ত যাবতীয় তথ্য জানতে আমাদের ভূমি অফিস সাহায্য করে। ভূমি অফিস থেকে আমরা সায়রাত মহাল সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পারবো। সায়রাত মহাল এর তথ্যাদি ভূমি অফিসে রক্ষিত রেজিস্টার 6 হতে পাওয়া যায়। রেজিস্টার 6 ভূমি অফিসের অন্তর্গত সব সায়রাত মহাল এর তফসিল, ইজারাদার এর নাম, কত সময়ের জন্য ইজারা নেওয়া হয়েছে এবং কি প্রকারের চালানে সরকারি কোষাগারে অর্থ জমা প্রদান করা হয়েছে ইত্যাদি তথ্য লিপিবদ্ধ থাকে। সুতরাং তোমরা খুব সহজে বিষয়টি বুঝতে পেরেছ। শিখতে চাও তাহলে পরের অনুচ্ছেদ পড়তে থাকুন।আমি আপনাদের জন্য তৈরি করেছি এই পোস্টটি। অবশ্যই কিছু না কিছু আপনাদের সাহায্য করবে এই পোস্টটি পড়ার পর।
৩. কোর্ট অব ওয়ার্ডস:
বন্ধুগণ পূর্বের টপিকে আলোচনা করে আমরা অনেক বিষয় আপনাদের জানিয়েছি।
আশাকরি সকলে খুব সহজে বুঝতে পেরেছেন টপিকগুলো।এখন আমরা জানবো কোর্ট অব ওয়ার্ডস সম্পর্কে জানব।
কোর্ট অব ওয়ার্ডস শব্দটি বুঝতে হলে আমাদের প্রথমে জানতে হবে তা হল এর অর্থ বোঝা।কোর্ট (court) শব্দের অর্থ দেওয়ানী আদালত (Civil Court) এবং ওয়ার্ডস শব্দের অর্থ রক্ষণাবেক্ষণকারী অভিভাবক।অর্থাৎ কোর্ট অব ওয়ার্ডস বলতে বুঝতে পারি অন্যের সম্পত্তি রক্ষণাবেক্ষণ করা।
এখন আমরা জানবো কোর্ট অব ওয়ার্ডস এর বিস্তারিত তথ্য। 1793 সালে ব্রিটিশরা চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত প্রথা প্রবর্তিত করে।ফলাফলস্বরূপ জমিদারদের অনুকূলে চিরকাল জমি বন্দোবস্ত দেওয়ার প্রেক্ষিতে জমিদারগণ বংশধারায় জমি ভোগের অধিকার পায়।কিন্তু এখানে একটি সমস্যার সম্মুখীন হতে হয় জমিদারদের কে। সমস্যাটি হচ্ছে-জমিদারি পরিচালনায় অক্ষম বা অপরিপক্ক মহিলা সরকার ঘোষিত অপ্রাপ্তবয়স্ক জমিদার দেওয়ানী আদালত গঠিত মানসিকভাবে অপ্রকৃতিস্থ ও পরিচালনায় অক্ষম অথবা শারীরিক অসমর্থতা অঙ্গহানি প্রভৃতি কারণে অপারক এবং সরকার বিবেচিত অপারগ এরূপ জমিদারদের জমিদারি পরিচালনার জন্য সরকারিভাবে অভিভাবকত্বের প্রয়োজন দেখা দেয়।ফলাফল স্বরূপ সমস্যা সমাধানের জন্য বিভিন্ন পদ্ধতি আলোচিত হয়। এই পদ্ধতির বিভিন্ন রকম সমালোচনা করা হয়।
ব্রিটিশ সরকারের আমলে 1879 সালের 30 জুলাই কোর্ট অফ ওয়ার্ডস আইন কার্যকর হয়। ফলাফলস্বরূপ প্রণীত হয় 1979 সালের কোর্ট অব ওয়ার্ডস আইন।কোর্ট অব ওয়ার্ডস আইন যারা পরিচালনা করে সেই প্রতিষ্ঠান কাজ হচ্ছে-সম্পত্তির হেফাজতকারী কারণ হিসেবে দায়িত্ব পালন করা।যারা নিজেদের সম্প্রতি হেফাজত করতে পারে না তারা কিছু নিয়মকানুন মেনে দলিলের মাধ্যমে কোর্ট অব ওয়ার্ডস এর কাছে সম্পত্তি অর্পণ করতে পারবেন।কিন্তু আপনারা এটা ভাববেন না যে সম্পত্তির মালিকানা সরকার হয়ে যাবে! তা কখনোই নয়। সরকার শুধু সম্পত্তির দেখভাল করবে এবং আপনার সম্পত্তি নিজের রয়ে যাবে।
পাঠকরা আশাকরি সকলে খুব সহজেই বুঝতে পারছেন আজকের আলোচ্য বিষয়।এখন আমরা চলে যাব আমাদের পরবর্তী ধাপে।
৪.দেবোত্তর সম্পত্তি:
ইতিপূর্বে আমরা জেনেছি কোর্ট অব ওয়ার্ডস সম্পর্কে। উৎসর্গকৃত সম্পত্তি বা সম্পত্তিকে দেবোত্তর সম্পত্তি বলে।হিন্দু ধর্মের মতে,ধর্মীয় কাজের জন্য অর্থাৎ, মন্দির ,শ্মশান, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান পরিচালনা এবং ধর্মীয় উপাসনালয় ইত্যাদি যে সম্পত্তি উৎসর্গ করা হয় তাকে দেবোত্তর সম্পত্তি বলা হয়।যে ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান দেবোত্তর সম্পত্তি পরিচালনা দেখাশোনা করেন তাকে সেবাইত বলা হয়। ভূমি মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন এক বা একাধিক ট্রাস্টিবোর্ডের দ্বারা দেবোত্তর সম্পত্তির পরিচালনা করা হয় বা পরিচালিত হয়।
৫. ওয়াকফ সম্পত্তি:
ওয়াকফ সম্পর্কে বুঝতে হলে আমাদের প্রথমে জানতে হবে ওয়াকফ শব্দের অর্থ কি? ওয়াকফ একটি আরবী শব্দ। যার অর্থ খুব সুন্দর।এর সমার্থক শব্দ হচ্ছে হাবুস।ওয়াকফ হাবুস নামে পরিচিত।
ইসলামী বিধান অনুসারে, ধর্মীয় কাজে কোন ভবন, সম্পদ, ভূমি ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের তৈরি করার উদ্দেশ্যে দান করাকে ওয়াকফ বলে। ওয়াকফকৃত সম্পত্তি কে ওয়াকফ সম্পত্তি বলে।যেসব সম্পদ ওয়াকফ করা হয়, তা সাধারণত ট্রাস্টি বোর্ডের মাধ্যমে পরিচালিত হয়।যখন কোন উপযুক্ত মুসলিম ব্যক্তি সম্পূর্ণ সুস্থ থেকে সুস্থ মস্তিষ্কে তা বৈধ বা নিজের মালিকানার সম্পত্তিকে ধর্মীয় দাতব্য দুষ্ট মানবতার সেবায় ইত্যাদি সারা জীবনের জন্য উৎসর্গ করেন তাকে ওয়াকফ সম্পত্তি বলে। যে ব্যক্তি বা ব্যক্তিবর্গ কোন সম্পত্তি দান করেন তাকে ওয়াকিফ বলা হয়। ওয়াকফ সম্পত্তি পরিচালনার জন্য যিনি নিয়োজিত হন তাকে মোতাওয়াল্লী বলে।বিশেষ করে কোন অমুসলিম ব্যক্তি ওয়াকফ সম্পত্তি দান করতে পারেন।
ওয়াকফ সম্পত্তি পরিচালনার জন্য ওয়াকফ প্রশাসক নিয়োগ করা হয়।
৬. পরিত্যক্ত সম্পত্তি:
আমরা সকলেই জানি 1971 সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ হয়। এই যুদ্ধে ৩০ লক্ষ ব্যক্তি বর্গ গন শহীদ হয়েছিলেন। তাদেরকে খুব নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। এই শহীদ হওয়ার পেছনে দায়ী ছিল দেশীয় রাজাকার আলবদর ,আলশামস বাহিনীর। অবশেষে বাংলাদেশে বিজয় অর্জন করেছিল।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ চলাকালীন সময়ে যারা পশ্চিম পাকিস্তান নি সেনাবাহিনীকে সাহায্য সহযোগিতা করেছিল, পাকিস্তান সরকারের সাথে হাত মিলিয়ে ছিল এবং স্বাধীনতা অর্জনের পর তাদের সকল সম্পত্তি ত্যাগ করে এ দেশ হতে পলায়ন করে বা আত্মগোপন করে অনুপস্থিত থাকে এবং যারা নিজের সম্পত্তি তত্ত্বাবধায়ন করেনি বা অক্ষম হয়ে পড়ে তাদের সম্পত্তিকে পরিত্যক্ত সম্পত্তি হিসেবে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।
আরো কিছু জানতে চাইলে সাথে থাকুন:
২.মৌজা ম্যাপ বলতে কি বুঝায়? মৌজা ম্যাপ কি?
৩.খতিয়ান নম্বর কি?What is the Ledger number?
৪.খতিয়ান এর বিস্তারিত ব্যাখ্যা।
৫.জরিপ (survey)। সিএস জরিপ। আর এস জরিপ। এস এ জরিপ।
৬.পর্চা। পর্চা বলতে কী বোঝায়?
৭.সম্পত্তির প্রকারভেদ। সম্পত্তির ধরন। বিভিন্ন প্রকার সম্পত্তি।
৮.জরিপ। জরিপ কি? জরিপ বলতে কি বুঝায়? জরিপের সাধারণ জ্ঞান।
৯.দাগ বলতে কি বোঝায়?দাগ কি?ভূমি জরিপে দাগ বলতে কি বোঝায়?
১০.বাংলাদেশ পাসপোর্ট অফিসের তালিকা।
৭. খাস জমি ও পাবলিক ইজমেন্ট:
আমরা জানি,কোন মৌজার খতিয়ান নম্বর ১ হতে শুরু হয়।মৌজার রেকর্ডের ভলিউম খুললে প্রথমেই যে খতিয়ান দেখা যায় সেটি হলো ১নং খতিয়ান।এ খতিয়ানের মালিকের অংশে কোনো ব্যক্তির নাম লেখা থাকবে না।এর বদলে লেখা থাকবে , বাংলাদেশ সরকার এর পক্ষে জেলা প্রশাসক ও জেলার নাম। উক্ত খতিয়ানে যেসকল দাগ নম্বর থাকবে ও সে দাগের পাশে যে জমির পরিমাণ লিখা থাকে সে সকল জমিই খাস জমি।
তবে এটা মনে রাখতে হবে যে, 1 নং দাগ খাস জমি নয়। 1 নং খতিয়ান হল খাস জমি। অতি সহজে বুঝতে চাইলে, আমরা এটাও বলতে পারি, সম্পূর্ণভাবে সরকারের হাতে ব্যস্ত ও গভমেন্টের নিয়ন্ত্রণাধীন ভূমি খাস জমি। আবার এটা ভেবে নেওয়া যাবেনা যে সরকারি দপ্তরের বা সরকারি অফিসের যে সম্পদগুলো এগুলো সবই খাস জমি। এটা কখনোই সত্য নয়। যেমন-গভমেন্ট অফিস, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বাজে কত ধরনের গভমেন্টের প্রতিষ্ঠান জমি খাস জমি নয়, আমরা গভমেন্টের জমি বলে থাকি।
তাহলে আমরা বলতে পারি যে শুধু এক নং খতিয়ানভুক্ত জমি গুলো বা দাগ গুলো খাস জমি।
আমরা এটা সকলে জানি খাস জমির জন্য কোন সরকারি কর ধার্য করা হয় না। কিন্তু গভারমেন্ট বা সরকারি জমির জন্য সরকারি কর দারজো করা হয়। এখন আমাদের মাথায় একটি প্রশ্ন জাগছে সরকারি জমি আমরা কিভাবে চিনতে পারব? সরকারি জমি গুলো খুঁজে পেতে আমাদের 2 নং খতিয়ানে দেখতে হবে।সাধারণত 2 নং খতিয়ানের জমি সরকারি জমি হয় থাকে। আমরা জানি, খাস জমির ভূমি উন্নয়ন কর প্রদান করতে হয় না। কিন্তু সরকারি জমির জন্য ভূমি উন্নয়ন কর পরিশোধ করতে হয়।সরকারি জমি গুলো সম্পর্কে জানতে চাই তাহলে রেকর্ড ভলিয়মে 2 নং খতিয়ান থেকে বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠানের জমির রেকর্ড দেখতে পারবো।
কিভাবে খাস জমি চিনব:
খাস জমি দেখতে হলে প্রথমে আমাদেরকে ওই মজার এক নম্বর রেকর্ড ভলিয়মের সূচি দেখতে হবে। দাগ সূচিতে যদি ওই দাগের পাশে এক 1 নং খতিয়ান লেখা থাকে তাহলে আমরা বলবো ওই দাগের জমি খাস জমি । এরপর পরবর্তী ধাপ হচ্ছে, ওই মৌজার 1 নং খতিয়ান যাচাই করলে দেখা যাবে দাগটি সেখানে লেখা আছে। একটি দাগের সকল জমি খাস জমি হতে পারে আবার কিছু জমি খাস এবং কিছু জমি ব্যক্তিমালিকানায় থাকতে পারে। চলুন জেনে নেই আরো বিস্তারিত। মনে করি পদুয়া মৌজা দাগ সূচিতে 355 দাগের পাশে খতিয়ান নম্বর এবং জমির পরিমাণ 30 শতাংশ লেখা আছে। তারপরে লাইনে ৩৫৫ একটি আবার লেখা এবং তার পাশে খতিয়ান নম্বর ২০৫ ও জমির পরিমাণ 20 শতাংশ লেখা আছে। তাহলে আমরা খুব সহজেই বুঝতে পারছি যে, পদুয়া মৌজায় ৩৫৫ দাগের মোট জমির পরিমাণ ৫০ শতাংশ।৫০ শতাংশ জমির মধ্যে ৩০ শতাংশ সরকারি খাস খতিয়ান ভুক্ত জমি ।১৫ শতাংশ জমি ব্যক্তি মালিকানাধীন জমি।এতসব পদ্ধতি অবলম্বন করার পরও আমাদের খাস জমি নিয়ে আরো দুর্বিপাকে পড়তে হয়। অনেক সমস্যায় পড়তে হয়।চলুন জেনে নিই খাসজমি সম্পর্কে আরো অন্যান্য সমস্যা গুলো যা আমরা সমাধান করে দেখাবো।
প্রায় সময় আমরা দেখতে পাই যে,পূর্বের জরিপে অর্থাৎ এস এ জরিপে কোন দাগের জমি 1 নং খাস খতিয়ান ভুক্ত ছিল কিন্তু পরবর্তী জরিপে তা ব্যক্তিমালিকানাজয় রেকর্ড হয়েছে। চলুন জেনে নিই বিস্তারিত। পদুয়া মৌজা 24৫ দাগের পাশে খতিয়ান নম্বর 46 এবং জমির পরিমাণ 20 শতক লেখা আছে। পাশের কলামে 245 এর সাবেক দাগ হিসেবে একশত 56 এবং জমির পরিমাণ 20% লেখা আছে। এস এ রেকর্ড এর দাগ সূচিতে যদি হালদাগ 156 এর পাশে খতিয়ান নম্বর এক লেখা থাকে তাহলে বুঝতে হবে যে বর্তমান জরিপের 245 দাগটি পূর্বের জরিপে 1 নং খতিয়ানভুক্ত ছিল।
পাবলিক ইজমেন্ট:
কোন মৌজা যে সকল খাস জমি জনগণ বিভিন্ন কাজে ব্যবহার করে থাকেন তাকে আমরা সাধারণত পাবলিক ইজমেন্ট জমি বা জনগণের ব্যবহৃত জমি বলে আখ্যায়িত করে। উদাহরণস্বরূপ-
১.হালট
২.নদী
৩.খাল
৪.রাস্তা
৫.বিল ও
৬.গোপাট ইত্যাদি।
কোন মৌজার 1 নং রেজিস্টার 11 নং বলিয়মের প্রথমদিকে ওই মৌজা সকল পাবলিক ইজমেন্ট বা জনগণের ভূমি জমির তালিকা থাকে। এছাড়াও খাসজমি হওয়ার কারণে 1 নং খতিয়ান ও পাবলিকে ভক্ত জমির দাগ সমূহ লিপিবদ্ধ থাকে।
৮.আট নং রেজিস্টার:
8 নং রেজিস্টার বলতে আমরা অনেকই অজ্ঞাত নয়. 8 নম্বর রেজিস্টার কী তা আমরা অনেকেই বুঝি না। চলুন শিখে নেই ৮ নং রেজিস্টার বলতে কি বুঝায়? 8 নং রেজিস্টার ভূমি অফিসের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ এবং প্রয়োজনীয়। অনেকে জেনে থাকবেন ৮নং রেজিস্টারকে খাস জমির রেজিস্টার বলা হয়। চলুন আজকে শিখে নেব খুব সহজেই।সরকারি নীতিমালা অনুযায়ী যে সকল খাস জমি বন্দোবস্ত দেয়া হয় তাকে বন্দোবস্তযোগ্য খাসজমি বলে। আবার সামান্য কিছু জমি আছে যা জনগণ ব্যবহার করে থাকে। এসব জমি গুলোকে বলা হয় অভ্যস্ত জমি। আবার কিছু খাস জমি রয়েছে যা সরকার ক্রয় করে। অন্যথায় পরিত্যক্ত হওয়ার কারণে খাসজমি পরিণত হয়। এছাড়াও কিছু কিছু জমি আছে যা অজ্ঞতাবশত বা প্রাকৃতিক কারণে নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যায়। এ ধরনের জমিকে সাধারণত সিকস্তি জমি বলা হয়।যখন কোনো জমি নদীগর্ভে বিলীন হওয়ার পর আবার পুনরায় জেগে ওঠে যাকে আমরা সাধারনত সাধারণত পয়স্তি জমি বলি।
8 নং রেজিস্টার চার প্রকার হয়ে থাকে বা চারটি অংশে বিভক্ত থাকে। প্রথম অংশে অবন্দোবস্তযোগ্য খাস জমি, দ্বিতীয় অংশে বন্দোবস্তযোগ্য খাস জমি, দ্বিতীয় অংশে সরকার কর্তৃক ক্রয় করা জমি এবং চতুর্থ অংশে নদী সিকস্তি খাস জমি তথ্য লিপিবদ্ধ থাকে।
৯.অর্পিত সম্পত্তি:
১৯৬৫ সালের পাক-ভারত যুদ্ধের সময় (6 সেপটেম্বর 1965 হতে 16 ফেব্রুয়ারি 1969 পর্যন্ত) যেসব নাগরিক পূর্ব পাকিস্তান ত্যাগ করে ভারত গমন ও অবস্থান করেন বা এর পূর্বে যেকোনো সময় ভারত ভ্রমণ করে যুদ্ধের সময় ভারতে অবস্থান করা অবস্থান করে তাদের সম্পত্তি পাকিস্তান প্রতিরক্ষা অধ্যাদেশ 1965 এর মাধ্যমে শত্রু সম্পত্তি হিসেবে ঘোষণা করা হয় এবং 1974 সালে সম্পত্তির নাম দেয়া হয় অর্পিত সম্পত্তি।আমরা সকলেই জানি অর্পিত সম্পত্তি কে দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছে ,ক তফসিলভুক্ত জমি ও খ তফসিলভুক্ত জমি। ক তফসিলভুক্ত সম্পত্তি হলো সেই সম্পত্তি যা সরকারি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে এবং সরকারী বিধি মোতাবেক ইজারা প্রদান করেছে। খ তফসিলভুক্ত সম্পত্তি হলো সে সম্পত্তি যা সরকারের নিয়ন্ত্রণে নেই এবং সরকার কখনো বিধি মোতাবেক ইজারা প্রদান করেন নাই।
সম্পত্তিগুলো কোন তফসিলভুক্ত তা আপনি কিভাবে জানবেন? ক ও খ তফসিল এর জন্য পৃথক গেজেট রয়েছে। পূর্বের দাগ যে মৌজায় অবস্থিত সেই মোজার অর্পিত সম্পত্তির গেজেট তালিকা যাচাই করলে ক তফসিলভুক্ত তা যাচাই করা যায়। এছাড়াও ভূমি অফিসে অর্পিত সম্পত্তি একটি আদমশুমারি তালিকা রয়েছে। সেই তালিকা দেখলো সম্পত্তি কখনো অর্পিত ছিল কিনা তা জানতে পারবেন।
See the more topic:
1.কম্পিউটার কি?:https://nahidec50.blogspot.com/2022/10/what-is-computerwhat-does-computer-mean.html
2.The history of computer.কম্পিউটারের ইতিহাস বলতে কী বোঝায়? কম্পিউটারের সঠিক ইতিহাস ।:The history of computer.
Follow me:
1.Facebook:https://www.facebook.com/mdnahid456?_rdc=1&_rdr
2.Youtube:https://www.youtube.com/channel/UC87O_kSJomKCJtWnYAjFu9Q/featured
খুব ভালো হয়েছে!
ReplyDeleteThanks
Delete